বিশ্ব ভালবাসা দিবস” বা ”ভ্যালেন্টাইনস ডে”-এর পটভূমি

বিশ্ব ভালবাসা দিবস” বা ”ভ্যালেন্টাইনস ডে”-এর পটভূমি
১৪ ই ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে বেশ পরিচিত একটি নাম “বিশ্ব ভালবাসা দিবস” বা ”ভ্যালেন্টাইনস ডে”। একজন ভালোবাসা প্রেমী ও সচেতন মানুষ হিসাবে ”ভ্যালেন্টাইনস ডে” কি? এর পেছনের লুকানো ইতিহাস আসলে কি? আমি মনে করি একজন সচেতন মানুষ কোন কাজ করার আগেই সে কাজটি সম্পর্কে অন্ততঃপক্ষে সেটা জানার চেষ্টা করবেন। ”ভ্যালেন্টাইনস ডে” সম্পর্কে এখন বোধহয় পরিস্কার ধারনা থাকা অপরিহার্য হয়ে দেখাদিয়েছে।

ভ্যালেন্টাইনস ডে যেভাবে আসলঃ

প্রথমঃ রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আমলের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেনটাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপী এবং খৃষ্টধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। ঐ সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। সম্রাটের বারবার খৃষ্টধর্ম ত্যাগের আজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
Related imageRelated image

দ্বিতীয়ঃ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। এক কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এক সময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনের ভালবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালবাসার কথা সম্রাটের কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।

তৃতীয়ঃ খৃষ্টীয় ইতিহাস মতে, ২৬৯ খৃষ্টাব্দের কথা। সাম্রাজ্যবাদী, রক্তপিপাষু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের দরকার এক বিশাল সৈন্যবাহিণীর। এক সময় তার সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দেয়। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি নয়। সম্রাট লক্ষ্য করলেন যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল হয়। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায়। যুবক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজকও সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াসকে ভালবেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গীর্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি এক সময়ে সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন।

You Might Also Like   What is The Best Treatment of Toothache Before Going Dentist

চতুর্থঃ আরেকটি খৃষ্টীয় ইতিহাস মতে, গোটা ইউরোপে যখন খৃষ্টান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালিত হতো রোমীয় একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে পূর্ণবৎসর ঐ মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো। এ রীতিটি কয়েকজন পাদ্রীর গোচরীভূত হলে তারা একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খৃষ্টান ধর্মায়ণ করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে। কারণ এটা খৃষ্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খৃষ্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।

পঞ্চমঃ অন্য আরেকটি মতে, প্রাচীন রোমে দেবতাদের রাণী জুনোর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হতো। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোন বিয়ে সফল হয় না। ছুটির পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাজারও তরুণের মেলায় র‌্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়া চলত। এ উৎসবে উপস্থিত তরুণীরা তাদের নামাংকিত কাগজের সি¬প জনসম্মুখে রাখা একটি বড় পাত্রে ফেলত। সেখান থেকে যুবকের তোলা সি¬পের তরুণীকে কাছে ডেকে নিত। কখনও এ জুটি সারা বছরের জন্য স্থায়ী হত এবং ভালবাসার সিঁড়ি বেয়ে বিয়েতে গড়াতো।
ঐ দিনের শোক গাঁথায় আজকের এই “ভ্যালেন্টাইন ডে”।

বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে যেভাবে আসলঃ

১৯৯৩ সালের দিকে বাংলাদেশে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের আর্বিভাব ঘঠে। যায় যায় দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান। তিনি পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের ছোঁয়া নিয়ে দেশে এসে লন্ডনী সংস্কৃতির প্র্যাকটিস শুরু করেন। তিনি প্রথম যায় যায় দিন পত্রিকার মাধ্যমে বিশ্ব ভালবাসা দিবস বাংলাদেশীদের কাছে তুলে ধরেন। তেজগাঁওয়ে তার পত্রিকা অফিসে কেউ চাকরী নিতে গেলে না কি সাথে তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যেতে হতো। প্রেমের যুগললবন্দী কপোত-কপোতীকে দেখে ওনি না কি খুব খুশী হতেন। অভিধা প্রথম ব্যবহার করেন শফিক রেহমান। এজন্য শফিক রেহমানকে বাংলাদেশে ভালবাসা দিবসের জনক বলা হয়।

You Might Also Like   Abdominal Pain Treatment, Home Remedies

সুত্রঃপ্রথম আলো ব্লগ

আমার কিছু কথাঃআগামীকাল ভালোবাসা দিবস।শুধু বাঙ্গালীরা নয় সমগ্র পৃথিবীবাসী ভাসবে নতুন এক প্রেমের জোয়ারে, হাজার কোটি টাকা হয়ত খরচ হবে প্রিয়জনকে বিভিন্ন ধরনের অসাধারণ গিফট কিনে দিতে গিয়ে, এ যেন এক তুমুল প্রতিযোগিতা কে তার প্রিয়জনের কাছে নিজেকে কত বেশি আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে পারে……তবুও আমি আজ কিছু কথা বলতে চাই,আমাকে বলার সুযোগ দিতেই হবে…………আপনি হয়ত আপনার কাছের মানুষগুলোকে ভালোবেসে হাজার হাজার টাকার গিফট কিনে দেবেন,কিন্তু একটু আপনার আশেপাশে খোঁজ নিয়ে দেখবেন যে হয়ত এই দিনে একটি শিশু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার জন্য অঝরে কাদছে,কিন্তু তার অসহায় দরিদ্র মা-বাবা তাকে কিছুই দিতে পারছে না,হয়ত একটি শিশু স্কুলে তার নতুন বছর শুরু করেছে,কিন্তু টাকার অভাবে হয়ত সে কোন নতুন জামা পরে স্কুলে যেতে পারছে না,চাইলে হয়ত এমন হাজার হাজার উদাহারন দেওয়া সম্ভব হবে,কিন্তু আপনার নিজের যদি একটু উপলব্ধি হয় যে আমার প্রিয় মানুষটিকে হাজার টাকা দিয়ে কোন উপহার না দিয়ে তার থেকে অল্প কিছু টাকা কোন দরিদ্র শিশুকে দেওয়া হয় তাহলে তার ঐ হাসিটার মত আনন্দ মনে হয় পৃথিবীতে আর কোথাও খুজে পাওয়া যাবে না,তাই আসুন না এবার ভ্যালেন্টাইনটা না হয় একটু অন্যভাবেই করলাম….